Select Menu
সাধারণত আমি যে কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না কিছু লিখি। কিন্তু দুই দিন পেরিয়ে গেলেও লিখতে পারছি না। দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কিন্তু আমি বোকা দর্শকের মতো দেখছিলাম সবকিছু। জাফর ইকবাল বলেছেন, ছাত্ররা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলার এত বড় অবমাননা তিনি আর দেখেননি। এই দৃশ্য দেখে তার গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছা করছে। দেশজুড়ে নিন্দার পাশাপাশি কেউ কেউ বলছেন, শাবিপ্রবিতে আকাশ ভেঙে পড়েনি। জয় বাংলার এর চেয়ে বড় অবমাননা অহরহই হচ্ছে। শিক্ষকদের ওপর ছাত্রদের হামলার ঘটনাও নতুন নয়। কদিন আগেও কচুয়ায় শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও যুবলীগের হামলার শিকার হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়েছে বলেই, আজ নিন্দার এত ঝড়। কিন্তু এর আগে যখন শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়েছে, এখন যারা নিন্দায় সরব, তখন তারা চুপ করে ছিলেন। তারা বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে না দেখার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রথম কথা হলো, ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়নি। তবে তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হকসহ শাবিপ্রবি শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়েছে। ছাত্ররা শিক্ষকদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে, লাথি মারছে; এটা দেখে জাফর ইকবালের মন গভীর বেদনায় আর্দ্র হয়েছে। এতটাই কষ্ট পেয়েছেন তিনি যে, তার গলায় দড়ি দেওয়ার কথা মাথায় এসেছে। এটা ঠিক, সব শিক্ষকের ওপর হামলা, শিক্ষকের অবমাননা সমান নিন্দনীয়। এটা মানতে দ্বিধা নেই, সব ঘটনায় আমরা সমান প্রতিক্রিয়া জানাইনি। ব্যাপারটি এমনই, প্রায়শই পত্রিকার ভিতরের পাতায় ধর্ষণের ঘটনা ছাপা হয়। সবাই পড়ে, আহা-উহু করে ভুলে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে একটা দুটা ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেয়। যেমন কদিন আগে ঢাকায় এক আদিবাসী তরুণী ধর্ষণের ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। শিশু নির্যাতনের ঘটনাও বিরল নয়, বরং আকসারই ঘটছে। কিন্তু সিলেটে রাজন হত্যা যেমন কাঁপিয়ে দিয়েছে সবার বিবেক, তেমন অন্যদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। এটাই আসলে প্রবণতা। কোনো একটা ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে, আমাদের ঘুমন্ত বিবেকে কষে থাপ্পড় দেবে। শিক্ষকদের অবমাননার ঘটনার শেষ উদাহরণ যেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ই হয়। একজন ছাত্র কীভাবে একজন শিক্ষকের ওপর হামলা চালাতে পারে, এটা আসলে আমার মাথায় ঢোকে না। একজন মানুষের জীবনে মা-বাবার পরেই শিক্ষকের অবস্থান। সামাজিক মর্যদায় শিক্ষকরা অনেক ওপরে থাকলেও আর্থিক প্রাপ্তিতে তারা অনেক পিছিয়ে। লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে- ছাত্রদের এই লোভ দেখালেও বাংলাদেশে শিক্ষকদের আয় সেই সাহেবের তিন পেয়ে কুকুরের একটি পায়ের সমান। তবে শিক্ষকদের মর্যাদা কখনোই টাকার অঙ্কে মাপা যায় না। অন্যদের কথা জানি না, আমি এখনো আমার প্রাইমারি স্কুলের কোনো শিক্ষকের সামনে গেলে কেঁপে উঠি ভয়ে-শ্রদ্ধায়। অনেক বাঘা বাঘা মানুষ দেখেছি শিক্ষকের সামনে নতজানু। আমরা তো এখনো অতটা বুড়ো হইনি যে যুগ পাল্টে গেছে। এই কবছরে আমাদের নীতি নৈতিকতায় এমন কি বড় ওলটপালট হয়ে গেল যে, আমাদের ছেলেরা শিক্ষককে লাথি দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। জাফর ইকবালের কণ্ঠে সেই অসহায়ত্ব, শিক্ষকের ওপর হামলা চালাতে পারে, এমন একজন ছাত্রও তৈরি করা উচিত হয়নি। তিনি কিন্তু তার নিজের ব্যর্থতার কথাই বলছেন। তার কণ্ঠে অপারগতা, ব্যর্থতার হাহাকার। তবে একজন ছাত্রকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়তে পারেননি শিক্ষকদের ব্যর্থতা বোধহয় এইটুকুতেই শেষ নয়। শিক্ষকদের ওপর ছাত্রদের হামলার অবিশ্বাস্য প্রবণতার আরও অনেকটা দায় শিক্ষকদেরও নিতে হবে। আমরা এখন অবলীলায় সব দোষ ছাত্রলীগের কাঁধে দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলার জন্য ছাত্রলীগকে ডেকে এনেছে কে, লেলিয়ে দিয়েছে কারা? নিশ্চয়ই উপাচার্য বা শিক্ষকদেরই আরেকটি অংশ